আমার বাংলা বই

প্রশ্ন উত্তর

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।

১।  ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা এদেশে কী করেছিল?

১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি সেনারা গভীর রাতে ঢাকার | নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। আক্রমণ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, আবাসিক এলাকায় নির্বিচারে হত্যা করে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে হত্যা করতে থাকে এদেশের মেধাবী, "আলােকিত ও বরেণ্য ব্যক্তিদের এ রাতেই হত্যা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনম্বী শিক্ষক এম. মুনিরুজ্জামান, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. গােবিন্দচন্দ্র দেবকে। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মুক্তিকামী সংবাদপত্র অফিসগুলোেও পুড়িয়ে দেয় তারা। লেখক-সাংবাদিক শহিদ সাবের, মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করে।

২।  রাজাকার আলবদর কারা? তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলি ও লিখি।

রাজাকার আলবদর : ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা এদেশে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা এদেশের মেধাবী, আলােকিত ও বরেণ্য ব্যক্তিদের হত্যা করার জন্য নীলনকশা তৈরি করে। সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য এদেশেরই কিছু পাষণ্ড নরপশুদের দিয়ে গঠন করে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী।

তাদের কর্মকাণ্ড : পাকিস্তানি সেনারা এদেশের সব রাস্তাঘাট ভালােভাবে চিনত না। রাজাকার ও আলবদর বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের তা চিনতে সহযােগিতা করে। তারা এদেশের মানুষদের হত্যা করতে সহায়তা করে। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তারাও এদেশের মেধাবী, বরেণ্য, আলােকিত ব্যক্তিসহ নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করতে মেতে ওঠে। রাজাকার-আলবদররা পাকিস্তানি সেনাদের সহযােগিতা না করলে তারা বাঙালির এত বড় ক্ষতি করতে পারত না। রাজাকার-আলবদররা এদেশের সঙ্গে বেইমানি করেছে, তারা বিশ্বাসঘাতক।

৩।  কোন শহিদ বুদ্ধিজীবী প্রথম পাকিস্তানি গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান? তাঁর সম্পর্কে বলি ও লিখি।

শহিদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই প্রথম পাকিস্তানি গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শত্রুসেনারা ৮৫ বছর বয়সের এই ব্যক্তিকে কুমিল্লার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির গর্ব।

৪।  শহিদ সাবের কে ছিলেন? তিনি কীভাবে শহিদ হন?

শহিদ সাবের ছিলেন প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি সেনারা এদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতাে সংবাদপত্র অফিসগুলােতেও আগুন দেয়। ঐ রাতে তারা দৈনিক ‘সংবাদ’ অফিসে আগুন দেয় । শহিদ সাবের ঐ রাতে অফিসেই ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থায় সংবাদ অফিসে আগুন লাগালে পড়ে মারা যান শহিদ সাবের। এভাবেই তিনি শহিদ হয়।

৫।  রণদাপ্রসাদ সাহাকে কেন দানবীর বলা হয়?

এদেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন রণদাপ্রসাদ সাহা। দানশীলতার জন্য লােকে তাকে ডাকত ‘দানবীর’ বলে। রণদাপ্রসাদ সাহা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ হন।

৭।  দুজন শহিদ সাংবাদিকের নাম বলি ও তাঁরা কোথায় কীভাবে শহিদ হন সে সম্পর্কে লিখি।

দুজন শহিদ সাংবাদিক হলেন : শহিদ সাবের ও মেহেরুন্নেসা। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে এদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মতাে সংবাদপত্র অফিসগুলাে আক্রান্ত হয় পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা। প্রধান সংবাদপত্রগুলাের অনেক অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা সেই রাতে। হত্যা করে বহু সাংবাদিককে। পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা দৈনিক ‘সংবাদ’ অফিসে আগুন দেয়। লেখক ও সাংবাদিক শহিদ সাবের ঐ রাতে অফিসেই ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থায় সংবাদ অফিসে তিনি পুড়ে মারা যান। ঐ রাতেই মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে শহিদ হন কবি-সাংবাদিক মেহেরুন্নেসা।

৮।  আমরা কেন চিরদিন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করব?

বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক। তাঁরা দেশের সবচেয়ে মেধাবী, বরেণ্য ও আলােকিত মানুষ। তাঁরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান । কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ নয় মাস ধরে অন্যান্য বাঙালির সঙ্গে এসব বুদ্ধিজীবীকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। গােবিন্দচন্দ্র দেব, শহিদ সাবের, মুনীর চৌধুরী। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তারা সারা জীবন চেষ্টা করেছেন এবং জীবন দিয়েছেন। এ কারণে আমরা চিরদিন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করব।

৯।  কোন দিনটিকে ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়? কেন?

১৪ই ডিসেম্বর ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয় ।
এ দিনটিকে পালন করার কারণ : ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মেধাবী, বরেণ্য ও আলােকিত মানুষদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। যখন তারা বুঝতে পারে যে, তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখন তারা সে যড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে। সে কারণে তাদের সেনারা ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনােয়ার পাশা, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ, লেখক-সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হােসেনসহ বহু বরেণ্য বাঙালিকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার ফলে এদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তাঁদের স্মরণে তাই প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়।

১০।  আমরা কীভাবে শহিদদের ঋণ শোধ করতে পারি?

শহিদরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের জন্য দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা। এ ঋণ এ দেশের প্রত্যেক মানুষের। এ দেশকে ভালােবেসে, দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করে এবং দেশের মানুষের কল্যাণের ও দেশের উন্নতির জন্য কাজ করলেই তাঁদের ঋণ কিছুটা শোধ করা যায়।

১১।  আমরা শহিদ মিনারে ফুল দিতে যাই কেন?

আমাদের দেশের বীর সন্তানেরা পাকিস্তানিদের ১৪৪ ধারা অমান্য করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বলে মিছিল করলে পাকিস্তানি পুলিশ চালায় এতে গুলি করে রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে শহিদ হন। এসব শহিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা শহিদ মিনারে ফুল দিতে যাই।

১২।  পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উপর হত্যাকা- চালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কী করেছিল?

পাকিস্তানিদের বিশেষ রকমের হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে মেধাশূন্য করা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী গড়ে তােলে।পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উপর হত্যাকা- চালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য -

১. পুরাে দেশে বিভিন্ন পেশার মেধাবী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি ও
২. তালিকা অনুযায়ী এদেশে মেধাবী ও বরেণ্য মানুষদের হত্যা করা।

১৩।  মুক্তিযুদ্ধে দেশের সাধারন মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে সাহায্য করেছিল?

এদেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও ভরসা যুগিয়েছিল এবং অনেকক্ষেত্রে খাদ্য, আশ্রয় ও তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছিল।

অল্প কথায় উত্তর দেই।

১।  কারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান?

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ নির্মমভাবে নিহত, বুদ্ধিজীবীরা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ছিলেন।

২।  পাকিস্তানি বাহিনী আলতাফ মাহমুদকে হত্যা করেছিল কেন?

পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র করে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা তৈরি করে। সেই নীলনকশা অনুসারে এদেশের স্বনামধন্য সুরসাধক আলতাফ মাহমুদকে হত্যা করেছিল।

৩।  পাকিস্তানিদের বিশেষ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য কী?

পাকিস্তানিদের বিশেষ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে মেধাশুন্য করা।

৪।  আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম কীভাবে?

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম।

৫।  ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন কেন?

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করছি। তাই এ দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।