আমার বাংলা বই

প্রশ্ন উত্তর

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।

১।  প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলতে কী বোঝ? বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সম্পর্কে যা জান লেখ।

‘প্রত্ন' শব্দের অর্থ হলাে পুরনাে বা প্রাচীন। প্রত্নতত্ত্ব বলতে মূলত । পুরনাে স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, মূর্তি বা ভাস্কর্য, অলংকার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরনাে মূল্যবান আসবাবপত্র ইত্যাদি বােঝায়। আর এসব প্রত্নবস্তু যে স্থানে পাওয়া গেছে সেই স্থানকে বলা হয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বাংলাদেশে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। কুমিল্লার ময়মনামতি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য।

ময়নামতি : কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। বর্তমানে ময়মনামতি অঞলে যে ধ্বংসস্তৃপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি নগরী ও বৌদ্ধবিহারের অবশিষ্টাংশ। ময়নামতি প্রত্নস্থলের কিছু উল্লেখযােগ্য স্থাপনা হলাে কোটিলা মুড়া, ইটাখােলা মুড়া, রূপবান মুড়া, শালবন বিহার। মহাস্থানগড় : পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গেছে।

পাহাড়পুর : এটি সােমপুর বিহার নামেও পরিচিত। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার । পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব এই বিহার তৈরি করেছিলেন। পাহাড়পুরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার বলা যেতে পারে। উয়ারী-বটেশ্বর : নরসিংদী জেলার বেলাবাে উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি মাটির নিচে অবস্থিত একটি দুর্গনগরী। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাটির নিচে থাকা এই স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনাে।

২।  উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কীভাবে মানুষের নজরে এলো?

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মােহাম্মদ হানিফ পাঠান এবং তার ছেলে। হাবিবুল্লাহ পাঠানের মাধ্যমে উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মানুষের নজরে আসে। ১৯৩৩ সালে শ্রমিকরা মাটি খনন করার সময় পাত্রে জমানাে কিছু মুদ্রা পায়। হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন এবং এ বিষয়ে তার ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠানকে সচেতন। করে তােলেন। হাবিবুল্লাহ পাঠান পরবর্তীতে এখান থেকে দুটি লােহার পিণ্ড এবং আরও একটি মুদ্রাভাণ্ডার পান। ১৯৭৪-৭৫ সালের পর তিনি। এখান থেকে প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন এবং সেগুলাে জাদুঘরে জমা দেন। এভাবে উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে মানুষ জানতে পারল এবং এ স্থানটি তাদের নজরে এলাে।

৩।  উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে অবস্থিত? এই এলাকাটির প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে পরিণত হওয়ার পিছনে কী কারণ তা লেখ।

উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের নরসিংদীতে অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত। এই এলাকাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে একসময় সুসভ্য মানুষের বসবাস। ছিল। ছিল নগর-সভ্যতা। কিন্তু ভূপ্রকৃতির বড় রকমের পরিবর্তনের কারণে এই এলাকাটি মাটিচাপা পড়ে যায়। এর ফলে এটি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে পরিণত হয়।

৪।  ব্রহ্মপুত্র নদ আগে কোথা দিয়ে প্রবাহিত হতো আর এখন কোথায়?

১৯৭০ সাল পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ময়মনসিংহ পেরিয়ে নরসিংদী জেলার বেলাবাের দক্ষিণ দিক থেকে প্রাচীন সােনারগাঁ নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। বর্তমানে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। নরসিংদী ও ভৈরবের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়।

৫।  কোন কোন নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায়?

২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে উয়ারী-বটেশ্বরে খনন কাজ শুরু হয়। খনন করে পাওয়া যায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গনগর। আরও পাওয়া যায় ইটের স্থাপত্য, বন্দর, রাস্তা, গলি, পােড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর, পাথরের বাটখারা, কাচের পুঁতি, মুদ্রাভাণ্ডার। মুদ্রাগুলাে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শনগুলাের মধ্যে প্রাচীনতম। এ থেকে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাটির নিচে থাকা এ স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনাে।

৬।  উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ যা ধারণা করেছেন তা বর্ণনা কর।

প্রাপ্ত নিদর্শনগুলাে থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন উয়ারী-বটেশ্বর প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনাে। সে সময় শীতলক্ষ্যা নদীপাড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সুসভ্য মানুষের বসবাস ছিল। ছিল নগর-সভ্যতা। পূর্ব-দক্ষিণ দিক দিয়ে ভৈরবের মেঘনা হয়ে এখানকার ব্যবসায়-বাণিজ্য সুদূর জনপদ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ঐতিহাসিকদের ধারণা, ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্য চলত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদূর রােমান পর্যন্ত উয়ারী-বটেশ্বর’ রাজ্যের যােগাযােগ ছিল।

৭।  ১৯৫৫ সালে বটেশ্বর গ্রামের শ্রমিকেরা কী ফেলে যান? কে সেগুলো দেখে অভিভূত হন?

১৯৫৫ সালে বটেশ্বর গ্রামের শ্রমিকেরা দুটি লৌহপিণ্ড ফেলে যান। ত্রিকোণাকার ও একমুখ চোখা ভারী লোহার পিণ্ডগুলো দেখে হাবিবুল্লাহ পাঠানের বাবা মোহাম্মদ হানিফ পাঠান অভিভূত হন।

৮।  উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উয়ারী-বটেশ্বর গ্রামের মাটি খুঁড়ে বহু প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। আর এ কারণে এ গ্রাম দুইটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বলা হয়। ১৯৩৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান উয়ারী-বটেশ্বর আবিষ্কৃত হয়। মোহাম্মদ হানিফ পাঠান প্রথম উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের প্রথম চেষ্টা স্বরূপ বঙ্গদেশ ও ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা সংগ্রহ করেন।

অল্প কথায় উত্তর দেই।

১।  উয়ারী-বটেশ্বর কীসের নাম?

প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।

২।  শ্রমিকেরা উড়িয়া গ্রামে মাটি খননকালে কত সালের পাত্রে জমানো মুদ্রা পায়?

১৯৩৩ পাত্রে জমানো মুদ্রা পায়।

৩।  কোন কোন নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায়?

পোড়ামাটির ফলক, মুল্যবান পাথর, পাথরের বাটখারা, কাচের পুঁতি, মুদ্রাভান্ডার প্রভৃতি নির্দেশ থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায়।

৪।  উয়ারী-বটেশ্বর কত বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর?

২৫০০ বছর।

৫।  ভারী লৌহ পিণ্ডগুলো কারা খুঁজে পায়?

বটেশ্বরের শ্রমিকেরা ভারী লৌহ পিণ্ডগুলো খুঁজে পায়।