বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা

প্রশ্ন উত্তর

মুখে মুখে উত্তর বলি

১। বীরশ্রেষ্ঠরা কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন?

দীর্ঘদিন পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায় শাসনে এদেশের মানুষকে অনেক কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। সারা বাংলাদেশ তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এ অবস্থায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে বীরশ্রেষ্ঠরা যুদ্ধ করেছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্যে বীরশ্রেষ্ঠরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।

২। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কীভাবে ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন - বর্ণনা করি।

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৪৯ সালে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা চার জন ৩রা জুলাই তারিখে রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে ভারতে প্রবেশ করেন। এভাবে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে ভারতে এসে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিলেন। তাঁর সাহস ও ক্ষিপ্রতার কারণে আক্রমণের ধারা ছিল ভিন্ন। অনেকগুলো অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়ে শত্রুসেনাদের খতম করেছেন তিনি।

৩। যুদ্ধবিমানের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে মতিউরের কী ঘটেছিল?

বৈমানিক মতিউর রহমান চেয়েছিলেন পাকিস্তান থেকে যুদ্ধবিমান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে। পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে মতিউর ছাত্রদের বিমান প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর একজন ছাত্র মিনহাজ রশিদ যেদিন বিমান নিয়ে আকাশে উড়বে, সেদিন মিনহাজের কাছ থেকে বিমানটি ছিনিয়ে ভারতে নিয়ে যাবেন। মতিউর পরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগ বুঝে মিনহাজের বিমানটিতে উঠে পড়ে এবং ক্লোরোফরম দিয়ে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে। কিন্তু কিছু সময় পরই মিনহাজের জ্ঞান ফিরে আসলে দুজনের মাঝে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বিমানটি থাট্টায় বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত বিমানের বাইরে পড়ে ছিল মতিউরের প্রাণহীন দেহ।

৪। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান যে অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন তার বর্ণনা দিই।

মুক্তিযুদ্ধের আরেক সাহসী যোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৮শে অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করার দায়িত্ব দেয়া হলো তরুণ সিপাহি হামিদুর রহমানের উপর। তিন প্লাটুন সৈন্য নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেন। রাতের আঁধারে অত্যন্ত সাবধানে তাঁরা গ্রেনেড ছুঁড়ে শত্রুর বাঙ্কার নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তখনই শত্রুর পুঁতে রাখা একটা মাইন বিস্ফোরিত হয়। পাকিস্তানি সেনারা সতর্ক হয়ে যায়। হামিদুরের সঙ্গে শুধু একটা রাইফেল আর দুটো গ্রেনেড। নির্ভুল নিশানায় তিনি প্রথম গ্রেনেড ছুঁড়ে শত্রুর আক্রমণকে স্তব্ধ করে দেন। কিন্তু দ্বিতীয় গ্রেনেডটা ছোঁড়ার মুহুর্তে শত্রুর মেশিনগানের গুলি এসে লাগে তাঁর গায়ে। শহিদ হন এই অকুতোভয় বীর।

৫। এক মহান বীরগাথার রচয়িতা তাঁরা - ব্যাখ্যা করি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া মহান বীরগাথার রচয়িতা সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ। তাঁদের বীরত্ব ও জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে তাঁরা কোনো কিছুর পরোয়া করেননি। স্বাধীনতা একটি সহজ বিষয় নয়। এই বীরদের মহান আত্মত্যাগ চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বীরত্বের এই কাহিনী প্রেরণা জোগাবে আমাদের স্বাধীনতার সুরক্ষায়।

৬। বীরশ্রেষ্ঠ কারা? বীরশ্রেষ্ঠদের নাম লিখ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এঁদের মধ্যে জীবনবাজি রেখে যারা লড়াই করেছিলেন তাঁরা আমাদের বীর যোদ্ধা। বীরত্বের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক হলো বীরশ্রেষ্ঠ। এরকম সাতজন বীর যোদ্ধাকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁরা হলেন-

১। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
২। হামিদুর রহমান
৩। মোস্তফা কামাল
৪। মোহাম্মদ রুহুল আমিন
৫। মতিউর রহমান
৬। মুন্সি আব্দুর রউফ ও
৭। নুর মোহাম্মদ শেখ।

৭। কার ডাকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল?

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তাঁর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতার লড়াই শুরু করেছিল বাংলাদেশের আপামর জনগণ।

৮। মতিউর রাহমান কে ছিলেন? তিনি কীভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল?

১৯৪১ সালে ঢাকায় মতিউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট।

বৈমানিক মতিউর রহমান চেয়েছিলেন পাকিস্তান থেকে যুদ্ধবিমান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে। পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে মতিউর ছাত্রদের বিমান প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর একজন ছাত্র মিনহাজ রশিদ যেদিন বিমান নিয়ে আকাশে উড়বে, সেদিন মিনহাজের কাছ থেকে বিমানটি ছিনিয়ে ভারতে নিয়ে যাবেন। মতিউর পরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগ বুঝে মিনহাজের বিমানটিতে উঠে পড়ে এবং ক্লোরোফরম দিয়ে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে। কিন্তু কিছু সময় পরই তাঁর জ্ঞান ফিরে আসলে দুজনের মাঝে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বিমানটি থাট্টায় বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত বিমানের বাইরে পড়ে ছিল মতিউরের প্রাণহীন দেহ। এভাবে মতিউর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

৯। হামিদুর রহমান কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? সিপাহী হামিদুর রহমানকেকিসের নেতৃত্ব দেওয়া হয়?

মুক্তিযুদ্ধের আরেক সাহসী যোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ১৯৫৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খর্দ খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের ২৮শে অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করতে হবে। দায়িত্ব দেয়া হলো প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপর। যার নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হলো তরুণ সিপাহি হামিদুর রহমানের উপর।

১০। পাকিস্তানি সেনারা কেন সতর্ক হয়ে গেল?

হামিদুর রহমান মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করার উদ্দেশ্যে তিন প্লাটুন সৈন্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। রাতের আঁধারে অত্যন্ত সাবধানে তাঁরা গ্রেনেড ছুঁড়ে শত্রুর বাঙ্কার নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তখনই শত্রুর পুঁতে রাখা একটা মাইন বিস্ফোরিত হয়। যার ফলে পাকিস্তানি সেনারা সতর্ক হয়ে যায়।