মহীয়সী রোকেয়া
প্রশ্ন উত্তর
মুখে মুখে উত্তর বলি
১। বেগম রোকেয়া কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
মহীয়সী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন।
২। বাড়িতে লোক একে রোকেয়া কোথায় কোথায় লুকিয়ে থাকতেন?
বাড়িতে লোক এলে তাঁকে কখনো চিলেকোঠায়, কখনো সিঁড়ির নিচে, কখনো দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে হতো। কারণ তখন ছেলে হোক বা মেয়ে হোক কারো সামনে আসাই ছিল নিষিদ্ধ।
৩। লেখাপড়ার বিষয়ে রোকেয়াকে কে কে সাহায্য করতেন?
সেকালে মুসলমান মেয়েদের লেখাপড়ার চল ছিল না। মুসলমান মেয়েদের তখন অভিভাবকেরা স্কুলেই যেতে দিতেন না। বাড়িতে যদিও তিনি কুরআন ও উর্দু শিখেছিলেন তারপরও তিনি বাংলা শিখতে চাইলেন। তাঁর বড় বোন করিমুন্নেসা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইব্রাহিম সাবেরের কাছে লেখাপড়া শিখেছিলেন। ভাই-বোন দু’জনই রোকেয়াকে খুবই স্নেহ করতেন। এই ভাই-বোনই তাঁকে লেখাপড়ার বিষয়ে সাহায্য করতেন।
৪। রোকেয়া কখন পড়াশোনা করতেন? কীভাবে করতেন?
যদিও রোকেয়া ভাই-বোনের কাছে পড়াশুনা করতেন তারপরও সেই লেখাপড়াটাও ছিল আরেক যুদ্ধ। রাত গভীর হলে ভাইয়ের কাছে শুরু হতো তাঁর জ্ঞানার্জন। বাবা-মা যখন গভীর ঘুমে থাকত, বাড়ি নিঝঝুম হয়ে যেত তখন মোমবাতি জ্বালিয়ে রোকেয়া বই খুলে বসতেন। এই বই সেই বই থেকে ভাই সাবের তাঁকে পাঠ দিতেন। জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণার্ত বোন রোকেয়া ভাইয়ের কাছে শিখেছেন কতো কিছু। রাতের পর রাত এভাবেই কেটে গেছে। কখনো কখনো পড়তে পড়তে ভোর হয়ে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে এভাবেই পড়া শিখেছেন রোকেয়া।
৫। সেকালে মেয়েদের অবস্থা কেমন ছিল?
সেকালে মেয়েদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। তখনকার মেয়েদের ঘরের বাইরে তো দূরের কথা, কারো সামনে যাওয়াও নিষেধ ছিল। ছেলে বা মেয়ে কারো সামনে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। মুসলমান মেয়েদের লেখাপড়ার চল ছিল না। অভিভাবকেরা মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতেন না। মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া হতো।
৬। রোকেয়াকে কেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়?
একসময় মেয়েদের ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। পড়ালেখার অধিকার থেকে মেয়েরা ছিল বঞ্চিত। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হতো। লেখাপড়া শিখতে না পারায় মেয়েরা জীবনে আর কিছুই করতে পারে না। বাইরে কাজ করার অধিকার তারা পায় না। সকল কিছুর অধিকার একমাত্র ছেলেদের। রোকেয়া বুঝেছিলেন ছেলেদের যে অধিকার মেয়েদেরও সেই অধিকার থাকা উচিত। যার জন্য সবার আগে যা প্রয়োজন তা হলো শিক্ষা। তিনি মেয়েদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে স্বামী মৃত্যুর আগে যে অর্থ রেখে গিয়েছিলেন তা দিয়ে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মেয়েদের অভিভাবকদের মেয়েদের শিক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তিনিই প্রথম মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন। তাই বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়।
৭। নারীশিক্ষা কেন প্রয়োজন। - বুঝিয়ে বলি।
গরুর গাড়ির থাকে দুটো চাকা। গাড়ি চলতে হলে দুটো চাকা সমান হতে হয়। একটা বড় আরেকটা ছোট চাকা হলে গাড়ি চলবে না। সমাজে ছেলে আর মেয়ে হচ্ছে তেমনই। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা যদি পিছিয়ে থাকে তাহলে সেই সমাজের কোনোদিন উন্নতি হতে পারে না। অর্থাৎ সমাজের উন্নতির জন্য নারীশিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। পুরুষের মতো নারীরাও সমাজের একটা বিরাট অংশ। তারা শিক্ষিত না হলে সমাজ অনেকাংশে পিছিয়ে পড়বে। তাছাড়া নারীদেরও পড়াশুনা করার অধিকার রয়েছে। তাঁদের সে অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী শিক্ষার বিকল্প নেই।
৮। অবরোধ প্রথা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
অবরোধ মানে হলো বাড়ির নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আটকে থাকা। বেগম রোকেয়া যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন সমাজ ব্যবস্থা ছিল মেয়েদের জন্য অত্যন্ত কঠোর। মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার, কারো সামনে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। পড়াশুনার কোনো অধিকার ছিল না। তাদেরকে কাটাতে হতো বন্দিজীবন। অবরোধপ্রথা বলতে মেয়েদের এই নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আটকে রাখার প্রথাকেই বোঝানো হয়েছে।
৯। মেয়েদের শিক্ষার জন্য বেগম রোকেয়া কী কী করলেন?
বেগম রোকেয়া প্রথম উপলব্ধি করলেন যে, সমাজে ছেলে-মেয়ে সবার সমান অধিকার থাকা উচিত। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা যদি পিছিয়ে থাকে সেই সমাজের কোনোদিন উন্নতি হতে পারে না। তাই তিনি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া অর্থ দিয়ে কলকাতায় স্বামীর নামে একটি মেয়েদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের অভিভাবকদের অনুপ্রাণিত করতেন মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য। তিনি মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সব মনের ভাবনা প্রকাশের জন্য কয়েকটা উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন- মতিচুর, অবরোধবাসিনী ও পদ্মরাগ।
১০। ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বৈষম্য দেখে তিনি কী মন্তব্য করেছিলেন?
ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বৈষম্য দেখে তিনি বলেছেন- গরুর গাড়ির থাকে দুটো চাকা। গাড়ি চলতে হলে চাকা দুটোকে সমান হতে হয়। একটা ছোট আরেকটা বড় হলে সেই গাড়ি চলবে না। মেয়ে আর ছেলে হচ্ছে সেরকমই। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা যদি পিছিয়ে থাকে সেই সমাজের কোনোদিন উন্নতি হতে পারে না।








