১। নুর মোহাম্মদ শেখ কীভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন?
নূর মােহাম্মদ শেখ ও তাঁর সাথি মুক্তিযােদ্ধাৱা পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা আক্রান্ত হন। যুদ্ধৱত অবস্থায় মুক্তিযােদ্ধা নান্নু মিয়া শত্রুর গুলিতে আহত হন। এ সময় নূর মােহাম্মদ নান্নু মিয়াকে এক হাতে কাঁধে নিয়ে অন্য হাতে দিয়ে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে মর্টারের গোলার আঘাতে তাঁর পা চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে নান্নু মিয়াকে সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়ে সবাইকে পিছু হটতে নির্দেশ দেন। আর গুলি চালাতে চালাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। এভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে নূর মােহাম্মদ শেখ মুক্তিযােদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
২। ল্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুর রউফের যুদ্ধের ঘটনাটা লিখি।
পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে অকুতােভয় বীরের মতাে লড়াই করেন বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুর রউফ।
একাত্তরের ৮ই এপ্রিল মহালছড়ির কাছে বুড়িঘাট এলাকার চিংড়ি খালের দুই পাশে অবস্থান নেন মুক্তিযােদ্ধারা। তাঁদের উদ্দেশ্য পাকিস্তানি নৌসেনাদের ওপর আক্রমণ করা। কিন্তু পাকিস্তানিরা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক বেশি। মৃত্যু অবধারিত জেনেও অসীম সাহসী মুক্তিযােদ্ধাৱা লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্থানিরা। এরকম এক মুহূর্তে হঠাৎ একটা গােলা এসে পড়ে মুন্সী আবদুর রউফের ওপর। এতে শহিদ হন এই বীর মুক্তিযােদ্ধা।
৩। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন কীভাবে শহিদ হয়েছিলেন?
বিশ্বাসঘাতক রাজাকার আর আলবদরদের হাতে শহিদ হন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন।
ডিসেম্বরের ১০ তারিখে খুলনাকে শত্রুমুক্ত করার জন্য নৌজাহাজ বিএনএস পলাশ ও বিএনএস পদ্মা নিয়ে ছুটে যান মুক্তিযােদ্ধারা | রুহুল আমিন ছিলেন নৌজাহাজ বিএনএস পলাশে। তাঁৱা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে হঠাৎ জাহাজ দুটির ওপর বােমারু বিমান থেকে বােমা ফেলা হয়। আহত অবস্থায় ঝাঁপ নিয়ে নদী সাঁতরে পাড়ে উঠে বােমার আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও শেষ রক্ষা হয় না তাঁর। নদীতীরে অপেক্ষমান রাজাকারদের নির্মমতার শিকার হয়ে শহিদ হন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন।
৪। গল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরযোদ্ধাদের সম্পর্কে যা জেনেছি তা নিজের ভাষায় লিখি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরযােদ্ধারা আত্মত্যাগের মাধ্যমে এদেশকে স্বাধীন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান অপরিসীম। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে তাঁরা প্রাণপণ লড়েছেন। ল্যান্সনায়েক নূর মােহাম্মদ শেখ, ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ, মােহাম্মদ রুহুল আমিন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে তাঁরা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। দেশের প্রতি ভালােবাস ও শ্রদ্ধাবােধের কারণেই তাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের রক্তের বিনিময়েই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
৫। বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছেন কাদের বিরুদ্ধে? তাঁদের ভরসা ও সাহস জুগিয়েছেন কারা?
বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি শত্রুসেনাদের বিরুদ্ধে। এদেশের সাধারণ মানুষ তাঁদের ভরসা ও সাহস জুগিয়েছেন।
৬। মোহাম্মাদ রুহুল আমিনকে কোন উপাধিতে ভূষিত করা হয়? আমরা কেন তাঁকে চিরদিন মনে রাখব?
বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মাদ রুহুল আমিনকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেছে। আমরা চিরদিন তাঁকে মনে রাখব। কারণ- তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহিদ হয়েছেন। তিনি ছিলেন অকুতোভয়ী এক বীর সৈনিক। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন।
৭। বাংলাদেশ সরকার মুন্সী আবদুর রউফের ত্যাগকে কীভাবে মূল্যায়ন করেছে? তাঁর সমাধিকে স্মৃতিস্তম্ভে রুপান্তরিত করেছে কেন?
বাংলাদেশ সরকার মুন্সী আবদুর রউফকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেছে। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ জীবন দিয়ে আমাদের দেশকে স্বাধীন করে গেছেন। তাই তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে সরকার তাঁর সমাধিকে স্মৃতিস্তম্ভে রুপান্তরিত করেছে।
অল্প কথায় উত্তর দেই।
১। মুন্সী আবদুর রউফ কোথায়, কোন তারিখে শহিদ হন?
মহালছড়ির কাছে বুড়িঘাট এলাকায়, ৮ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে।
২। প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে নূর মোহাম্মদ কী কৌশল নিয়েছিলেন?
প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে নূর মোহাম্মদ কৌশল হিসেবে বারবার তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন আর নিজেদের সংখ্যা যে কম তা যেন শত্রুরা বুঝতে না পারে তার জন্য পিছিয়ে গিয়ে অবস্থান নেওয়া।
৩। কেন নূর মোহাম্মদ বুঝতে পারলেন তাঁর মৃত্যু আসন্ন?
নূর মোহাম্মদ বুঝতে পারলেন তাঁর মৃত্যু আসন্ন কারণ - মর্টারের একটি গোলা সরাসরি তাঁর পায়ে আঘাত করে। গোলার আঘাতে তাঁর পা একেবারে চূর্ণ- বিচূর্ণ হয়ে যায়।
৪। যশোরের পাকিস্তানি ক্যাম্পের নাম কী ছিল?
যশোরের পাকিস্তানি ক্যাম্পের নাম ছিল ঘুঁটিপুর।
৫। নূর মোহাম্মদ কাকে কাঁধে তুলে নেন?
নূর মোহাম্মদ সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন। নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বলে তিনি তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।