আমার বাংলা বই

প্রশ্ন উত্তর

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।

১।  মাটির শিল্প বলতে কী বুঝি?

মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প বলতে আমরা বুঝি মাটির তৈরি শিল্পকর্ম। মাটিই এ শিল্পের প্রধান উপকরণ। এর জন্য দরকার হয় পরিষ্কার এটেল মাটি। কুমাররা তাদের হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান দিয়ে অনেক যত্ন করে মাটির শিল্প তৈরি করে থাকেন।

২।  বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকর্ম কোনটি?

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্পকর্ম হলাে মৃৎশিল্প বা মাটির শিল্প। বাংলাদেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছেন এই শিল্প।

৩।  শখের হাঁড়ি কী রকম?

মাটির শিল্পকর্মের মধ্যে শখের হাঁড়ি অন্যতম। শখের হাঁড়ি দেখতে খুব সুন্দর। শখ করে পছন্দের জিনিস এই সুন্দর হাঁড়িতে রাখা হয়, তাই এর নাম শখের হাঁড়ি। শখের হাঁড়িতে রয়েছে বৈচিত্র্য। এগুলো অনেক রং ও অনেক বর্ণে সাজানো মাটির হাঁড়ি। ফুল, পাতা, মাছের অপূর্ব ছবি আঁকা হয় সেই হাঁড়িতে।

৪।  বৈশাখী মেলায় কী কী পাওয়া যায়?

বৈশাখী মেলায় নিত্যদিনের দরকারি জিনিসের পাশাপাশি নানারকম শৌখিন জিনিস পাওয়া যায়। এ মেলায় যেসব জিনিসপত্র পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে—

বাঁশের তৈরি জিনিস: কুলাে, ডালা, ঝুড়ি, চালুনি, মাছ ধরার চাঁই, খালুই ইত্যাদি।
খাবার জিনিস: বাঙি, তরমুজ, মুড়ি-মুড়কি, জিলাপি, বাতাসা ইত্যাদি।
মাটির তৈরি জিনিস: নানা রঙের ফুল, পাতা ও মাছের ছবি আঁকা বিচিত্র সব হাঁড়ি। মাটির তৈরি টেপা পুতুল, ঘােড়া, হাতি, ষাড়, মাছ, কলস, সরা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা, পিঠে তৈরির নানা ছাঁচ ইত্যাদি।

৫।  মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান কী?

মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান হলাে মাটি। মাটি দিয়ে তৈরি হলেও সব ধরনের মাটি দিয়ে মৃৎশিল্প হয় না। এর জন্য দরকার হয় পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো হয়, তাই যেকোনো জিনিস তৈরি করা যায়। তবে এর জন্য অনেক যত্ন ও শ্রমের প্রয়োজন হয়।

৬।  কয়েকটি মৃৎশিল্পের নাম বলি।

কয়েকটি মৃৎশিল্পের নাম: মাটির কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা, নানা ধরনের খেলনা, টেপা পুতুল, পিঠে তৈরির নানারকম ছাঁচ, টেরাকোটা ইত্যাদি।

৭।  টেরাকোটা কী?

‘টেরা' অর্থ মাটি, আর ‘কোটা’ অর্থ পােড়াননা। পােড়ামাটির। তৈরি মানুষের ব্যবহারের সব রকমের জিনিস টেরাকোটা হিসেবে। পরিচিত। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতাে পুড়িয়ে যে শিল্পকর্ম। তৈরি হয় তাকে টেরাকোটা বলে। বাংলার অনেক পুরােনাে শিল্প এ টেরাকোটা।

৮।  বাংলাদেশের কোথায় পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়?

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পােড়ামাটির প্রাচীন শিল্প বা টেরাকোটা দেখতে পাওয়া যায়। শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে টেরাকোটার কাজ রয়েছে। তা ছাড়া বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদেও দেখা যায় পােড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ।

৯।  মাটির শিল্প কেন আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়?

বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্প । গ্রামের কুমাররা অনেক যত্নের সঙ্গে তাদের নিপুণ হাতের | কারুকার্যে তৈরি করে থাকেন বিভিন্ন ধরনের মাটির শিল্প । হাজার বছর আগে এ দেশে শুরু হয়েছে পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটার কাজ। এ দেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন, এগুলাে তার পরিচয় বহন করে। বিভিন্ন পুরাকীর্তির গায়ে টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায়। এগুলাে আমাদের সভ্যতার নিদর্শন। শিল্প ও সভ্যতার নিদর্শন বলেই মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।

১০।   মামার বাড়ি রসের হাঁড়ি-প্রচলিত এই কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়?

কথাটির মাধ্যমে মামাবাড়ির আতিথেয়তার দিকটিকে বােঝানাে হয়েছে। মামার বাড়িতে বেড়াতে গেলে কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা থাকে না। কোনাে পড়াশােনা থাকে না, বাধা থাকে না যেখানে খুশি অবাধে ঘুরে বেড়ানাে যায়। মামা-মামি আদর করে অনেক মজার মজার খাবার খাওয়ান। বেড়াতে নিয়ে যান। সেখানে সারাক্ষণ আনন্দের বন্যা বয়ে যায় বলে বলা হয়েছে, মামার বাড়ি রসের হাঁড়ি'।

১০।  দোআঁশ এবং বেলে মাটিতে মৃৎশিল্প হয় না কেন?

দোআঁশ এবং বেলে মাটিতে মৃৎশিল্প হয় না কারণ -
১। মৃৎশিল্পের জন্য আঠালো মাটির প্রয়োজন হয়, দোআঁশ মাটি আঠালো নয়।
২। বেলে মাটি ঝরঝরে, এ মাটিও আঠালো নয়।

১০।  কুমাররা কীভাবে মাটির পাত্র তৈরি করেন?

কুমাররা একটি কাঠের চাকায় নরম মাটির তাল লাগিয়ে নেন। এরপর হাত দিয়ে মাটির তাল ধরে চাকাটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাটির পাত্র তৈরি করেন।

১১।  ‘টেরাকোটা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব’ এসব ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?

পােড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সব রকমের জিনিস টেরাকোটা নামে পরিচিত। মৃৎশিল্প আমাদের প্রাচীন নিজস্ব শিল্প। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ও স্থাপত্যকলায় প্রাপ্ত পােড়ামাটির ফলক আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে। তাই এগুলাে আমাদের ঐতিহ্য ও গর্ব। মৃৎশিল্পের গুরুত্ব, এর আকর্ষণীয়তা, সহজলভ্যতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। এ পেশার সাথে জড়িতদের কারিগরি জ্ঞান সমৃদ্ধ করে সরকারিভাবে আর্থিক সুবিধাসহ নানা ধরনের সহযােগিতা প্রদান করতে হবে।

১২।  কারা মাটির পাটায় বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি করে? এগুলো জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী?

কুমোররা মাটির পাটায় বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি করে। আজকাল এগুলোর বিক্রি বেশ ভালো। এগুলো জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো -
সস্তায় পাওয়া যায়।
ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
এতে সুন্দর নকশার কাজ প্রতিফলিত হয়।

১৩।  পোড়ামাটির শিল্পকে আমাদের ঐতিহ্য বলা হয় কেন? বুঝিয়ে বল।

আমাদের দেশে বিভিন্ন শিল্পকর্মের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন শিল্পকর্মটি হচ্ছে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প। ছাঁচ অনুযায়ী মাটির তৈরি পোড়ানো ইট দিয়ে মন্দির বা নানা রকম পশুপাখি, মাছ, পুতুল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। বানানো হতো। তবে এক্ষেত্রে শিল্পমূল্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাটির ফলক বা পাত তৈরি করে তাতে ছবি উৎকীর্ণ করে পুুড়িয়ে স্থায়ী রূপ দেওয়া। এগুলোকে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির শিল্প বলা হয়। পোড়ামাটির শিল্প হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমে আমাদের প্রাচীন মৃৎশিল্প সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

অল্প কথায় উত্তর দেই।

১।  শিল্পকর্ম বলতে কী বুঝ?

যখন কোনকিছু সুন্দর করে আঁকি বা বানাই অথবা গাই, তখন তা শিল্প। শিল্পের এ কাজকে বলে শিল্পকর্ম।

২।  মৃৎশিল্পের জন্য মাটি ছাড়া আর কী কী দরকার হয়?

মৃৎশিল্পের জন্য মাটি ছাড়া আরও যেসব জিনিস দরকার হয় সেগুলো হলো-

কুমারদের হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান।
ছোটোখাটো যন্ত্রপাতি এবং কাঠের চাকা।

৩।  মৃৎশিল্পের জন্য কেমন মাটি দরকার?

মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান হলাে মাটি। মাটি দিয়ে তৈরি হলেও সব ধরনের মাটি দিয়ে মৃৎশিল্প হয় না। এর জন্য দরকার হয় পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো হয়, তাই যেকোনো জিনিস তৈরি করা যায়।

৪।  টেপাপুতুল কী?

টেপা পুতুল মাটির তৈরি পুতুল। কুমাররা নরম এঁটেল মাটির চাক হাতে নিয়ে টিপে টিপে নানা আকারের, নানা ধরনের পুতুল তৈরি করে থাকেন। মাটি টিপে টিপে এসব পুতুল তৈরি করা হয় বলে এগুলাের নাম টেপা পুতুল । বউ-জামাই, কৃষক, নথপরা ছােট্ট মেয়ে ইত্যাদি নানারকমের টেপা পুতুল পাওয়া যায়।

৫।  টেরাকোটা কোন শিল্পের অন্তর্গত কাজ?

টেরাকোটা মৃৎ-শিল্পের অন্তর্গত কাজ।

৬।  আনন্দপুরে কখন মেলা বসে?

পহেলা বৈশাখে আনন্দপুরে মেলা বসে।

৭।  গ্রামের শিল্পীরা কী দিয়ে রং তৈরি করে?

গ্রামের শিল্পীরা শিম ও কাঁঠাল গাছের বাকল থেকে রং তৈরি করে।