দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

  পাঠ ৬

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এমন কোনো দিক নেই, যার পরিপূর্ন বিবরণ ইসলাম দেয়নি। ইসলাম প্রাত্যহিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই দিয়েছে সহজ ও ভারসাম্যপূর্ণ নিয়মকানুন।
তাই মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু দোয়া পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।

সালাম বিনিময়ঃ

সালাম হলো শান্তির জন্য দোয়া করা। এটি একটি ইবাদত। সালাম বিনিময় পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করে দেয়।

কারো সাথে দেখা হলে অন্য কিছু না বলে প্রথমে “আসসালামু আলাইকুম” বলে সালাম দিতে “আসসালামু আলাইকুম” এর অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

সালামের জবাবে বলতে হবে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম”। “ওয়া আলাইকুমুস সালাম” এর অর্থ আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।

সালাম হলো ইমানের অঙ্গ এবং জান্নাতে প্রবেশের একটি রাস্তা। যে আগে সালাম দিবে সে বেশি সওয়াব পাবে। হযরত মুহাম্মদ (স) আগে সালাম দিতেন।

আউযুবিল্লাহঃ

এটি হচ্ছে শয়তান, খারাপ মানুষের ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া।

সম্পূর্ণ আউযুবিল্লাহ হচ্ছে –

“আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম”

অর্থঃ বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
কেউ সম্পূর্ণ আউযুবিল্লাহ পড়লে আল্লাহ তায়ালা তাকে আশ্রয় দেন, সাহায্য করেন, অনিষ্ট থেকে বাঁচান। শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করেন।

কুরআন মজিদ পড়ার আগে অবশ্যই সম্পূর্ণ আউযুবিল্লাহ পড়তে হবে।

বিসমিল্লাহঃ

যেকোনো ভালো কাজ ভালোভাবে শুরুর দোয়া।

সম্পূর্ণ বিসমিল্লাহ হচ্ছে –

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”

অর্থ- পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সকল ভালো কাজের আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলতে হয়। বিসমিল্লাহ বলে কোনো কাজ শুরু করলে আল্লাহ তায়ালা সেই কাজে বরকত দেন। কাজটি ভালো হয়, সুন্দর হয় এবং সহজে সমাধান হয়।
কুরআন মজিদ পাঠের আগে সম্পূর্ণ বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। তার আগে সম্পূর্ণ আউযুবিল্লাহ পড়তে হবে।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, ‘প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি আল্লাহকে স্মরণ না করে শুরু করা হয়, তাহলে তা বরকতহীন হয়ে যায়।’(মুসনাদে আহমদ ১৪/৩২৯)


আলহামদুলিল্লাহঃ

আলহামদুলিল্লাহ এর অর্থ সকল প্রশংসা আল্লাহরই।

ভালো কোনো কিছু দেখলে বা শুনলে এবং কোন ভালো কাজ শেষ করলে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ স্বরূপ আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়। কেউ আলহামদুলিল্লাহ বললে তাঁকে আল্লাহ সওয়াব দেন এবং এটা সর্বোত্তম দোয়া।

সুবহানাল্লাহঃ

সুবহানাল্লাহ এর অর্থ সকল পবিত্রতা আল্লাহর।

আল্লাহর কুদরতের কথা শুনলে বা দেখলে, আশ্চর্যজনক ভালো কোনো কাজ হতে দেখলে কিংবা বিস্ময়কর ভালো কোনো কথা শুনলে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে।
একবার আলহামদুলিল্লাহ বললে জান্নাতে একটি গাছ তৈরি হয়। আর একবার সুবহানাল্লাহ বললে সেই গাছে আল্লাহ তায়ালা একটি ফল তৈরি করে দেন।

মাশাআল্লাহঃ

মাশাআল্লাহ এর অর্থ আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই হয়।

এটি আলহামদুলিল্লাহ শব্দের মতোই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে কোনো সুন্দর এবং ভালো কাজ দেখলে এটি বলতে হয়।

ইনশাআল্লাহঃ

ইনশাআল্লাহ এর অর্থ মহান আল্লাহ যদি চান।

ভবিষ্যতের হবে, করবো বা ঘটবে এমন কোনো ভালো কাজের ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ বলতে হয়। ইনশাআল্লাহ বললে আল্লাহ খুশি হন। আল্লাহ খুশি হলে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। ভবিষ্যতের বাধাবিপত্তি কেটে যায়।
যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন কাজই আমাদের দ্বারা করা সম্ভব নয় তাই আমাদের উচিত প্রতিটি কাজ করার আগে ইনশাআল্লাহ বলে নেওয়া।

নাউযুবিল্লাহঃ

নাউযুবিল্লাহ এর অর্থ আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় চাই।

যে কোনো মন্দ ও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে এটি বলতে হয়।

আসতাগফিরুল্লাহঃ

আসতাগফিরুল্লাহ এর অর্থ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
অনাকাঙ্খিত কোনো অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে এটি বলতে হয়।

জাযাকাল্লাহ খাইরঃ

জাযাকাল্লাহ খাইর এর অর্থ মহান আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।

কেউ আপনার কোনো উপকার করলে তাকে জাযাকাল্লাহ খাইর বলতে হয়।

আল্লাহ হাফেজঃ

আল্লাহ হাফেজ অর্থ মহান আল্লাহ সর্বোত্তম হেফাজতকারী।

কারও কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আল্লাহ হাফেজ বলতে হয়।

খাওয়ার শুরু করার দোয়াঃ

বিসমিল্লাহি ও’আলা বারকাতিল্লাহ ।

অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ তায়ালার বরকতের সাথে এ খাবার খাচ্ছি।

খাওয়ার শেষ করার দোয়াঃ

আলহামদুলিল্লাহিল্লাজী আত্ব আ’মানি ওয়া ছাক্কানি ওয়া জাআলানি মিনাল মুছলেমীন।

অর্থঃ সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জন্য যিনি আমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন এবং আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন।

খাওয়ার শুরুতে দোয়া পড়তে ভুলে গেলে খাওয়ার মাঝে স্মরণ আসার পর এই দোয়া পড়তে হয়।

বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখীরাহ।

অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু এবং শেষ করছি।

টয়লেটে যাওয়ার আগে দোয়া

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবসী ওয়াল খাবায়িস।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি মন্দ কাজ ও শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার দোয়া

গুফরানাকা আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানী।

অর্থঃ আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন।

হাঁচি দিলে বলতে হবে -

আলহামদুলিল্লাহ

অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহরই।

হাঁচির উত্তরে বলতে হবে -

ইয়ারহামুকাল্লাহ।

অর্থঃ আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন।