এক গ্রামে একজন ধনী ব্যবসায়ী বাস করতো। তার প্রতিবেশী ছিল একজন মুচি। সে তার ছোট্ট ঘরে বসেই দিনের বেলা জুতো সারাবার কাজ করতো আর গুন গুন করে গান গাইতো। কাজ সেরে রাত্রে সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে সে ঐ ঘরেই ঘুমিয়ে পড়তো। একঘুমে রাত ভোর হয়ে যেতো। দরজা জানালা সে সব সময় খুলে রাখতো। একইভাবে আনন্দে ও নিশ্চিন্তে তার দিন কাটছিল।
এদিকে ধনী লোকটি সারাদিন টাকা পয়সা লেনদেন করতো আর রাত্রে সমস্ত টাকা সিন্দুকে রেখে ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ করে দিত। তাও সে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোতে পারতো না। সব সময় সে ভাবতো এই বুঝি সব ধনসম্পত্তি চুরি হয়ে গেল। তার মুখে হাসি ছিল না। রোজ সে মুচিকে দেখে ভাবতো “ও আমার চেয়ে কত সুখী। কোন চিন্তা নেই। কি আনন্দেই না ওর দিনগুলো কাটছে।”
একদিন ধনী লোকটি গরিব মুচিকে তার বাড়িতে ডাকলো। সে তার হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বললো “ভাই এই টাকাটা তুমি রেখে দাও। আমার দরকার নেই। এটা আমি তোমাকে দিলাম।” গরিব মুচি ভাবলো বড়লোক মানুষ দয়া করে টাকাটা দিচ্ছে। সে খুশি হয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে টাকাটা নিয়ে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে বিছানার নীচে টাকাগুলি সে সযত্নে রেখে দিল। কিন্তু রোজ রাত্রে তার ঘুম ভেঙ্গে যেতে লাগলো। বারবার উঠে সে দেখতো টাকা ঠিক আছে কি না। এই প্রথম তার চিন্তা হতে লাগলো। দরজা জানালা বন্ধ করে তার কষ্ট হচ্ছিল। সে মহা ফাঁপরে পড়লো।
একদিন সকালে সে টাকাগুলি নিয়ে ধনী ব্যক্তির বাড়িতে গেল। হাত জোড় করে সে তাকে বললো “মহাশয় আপনি আপনার টাকা ফিরিয়ে নিন। সামান্য টাকার জন্য আমি আমার রাতের ঘুম ও মনের আনন্দ হারাতে চাই না। আমি যেমন ছিলাম তেমনই শান্তিতে থাকতে চাই।”