- Home
- ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা
নবি-রাসুল
পাঠ ৩
নবি-রাসুল
আল্লাহ তাঁর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য যুগে যুগে যে সব মহামানবকে মনোনীত করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁদেরকে নবি-রাসুল বলা হয়।
নবি-রাসুলগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ। তাঁরা কেউ আল্লাহ অংশ বা আল্লাহর পুত্র ছিলেন না বরং মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ তাদের নির্বাচন করেছেন। তাঁরা বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, নিষ্পাপ ও বুদ্ধিসম্পন্ন। তাঁরা ছিলেন নিঃস্বার্থ ও মানবদরদি। তাঁরা সবাই ছিলেন আদর্শ মানব। তাঁদের উন্নত চরিত্রে মানবীয় গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে।
নবি-রাসূলগণ মানুষের নিকট আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেন। তাঁরা মানুষকে মহান আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা দিতেন। তাঁরা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী ও বিধান পৌছে দিতেন। আল্লাহপাকের নির্দেশ আদেশ নির্দেশ মেনে চলতে মানুষকে হাতে কলমে শিক্ষা দিতেন। তাঁরা সবসময় মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।
নবি-রাসুলগণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যাঁদের নিকট আসমানি কিতাব এসেছিল তাঁরা ছিলেন রাসুল আর যাঁদের নিকট আসমানি কিতাব আসেনি তারা হলেন নবি। নবিরা পূর্ববর্তী রাসুলের প্রচারিত ধর্ম প্রচার করতেন।
আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অনেক নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নবি-রাসুল এসেছে। এক মতে তাদের সংখ্যা সর্বমোট এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। অন্য মতে তাদের সংখ্যা ছিল দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। তার মধ্যে মাত্র ৩১৩ জন রাসুল ছিলেন। অতএব বোঝা যায় প্রত্যেক রাসুলই নবি ছিলেন কিন্তু প্রত্যেক নবি রাসুল ছিলেন না।
এই পৃথিবীতে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবি হলেন হযরত আদম (আ)। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিজেই মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাছে ১০টি সহিফা পাঠিয়েছিলেন। সহিফা মানে ছোট কিতাব।
সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল যে নবির সময়, তাঁর নাম হযরত নূহ (আ)। একজন নবিকে আগুনে ফেলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আগুন তাকে পোড়ায়নি। তাঁর নাম হযরত ইবরাহীম (আ)। যে নবিকে যবিউল্লাহ বলা হয় তার নাম ইসমাঈল (আ)। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পূর্বে সবচেয়ে সুন্দর মানুষ ছিলেন হযরত ইউসুফ (আ)। যে রাসুল সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন, তাঁর নাম হযরত মূসা (আ)। জিন-ইনসান, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গের বাদশাহ ছিলেন হযরত সুলায়মান (আ)। জন্মের পরেই কথা বলেছেন যে নবি, তাঁর নাম হযরত ঈসা (আ)।
আর শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হলেন আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স)। তাঁর পরে দুনিয়াতে আর কোনো নবি আসেননি, আসবেনও না। এজন্য তাকে বলা হয় খাতামুন্নাবিয়্যীন। খাতামুন্নাবিয়্যীন মানে সর্বশেষ নবি। আমরা সকল নবি-রাসুলকে বিশ্বাস, সম্মান ও শ্রদ্ধা করব। আর সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স) এর দেখানো পথে আমাদের জীবন পরিচালনা করব।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল এবং রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার পবিত্র মক্কা নগরীতে বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। তাঁর জন্মের আগেই পিতা আব্দুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর দাদার নাম ছিল আব্দুল মুত্তালিব। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় মুহাম্মদ এবং আহমাদ।
চারিত্রিক সকল ভাল গুণ ছিল তার মধ্যে । তিনি অহংকার, অপব্যয়, অর্থহীন ও অনৈতিক কথা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতেন এবং তিনি অন্যের দোষ খোঁজা ও কাউকে লজ্জা দেয়া থেকেও বিরত থাকতেন। সর্বদা মানুষের সাথে হাসিখুশি কথা বলতেন। অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হতেন। মানবতার কল্যাণে নিজের সম্পদ অকাতরে ব্যয় করতেন। তিনি ছিলেন সত্যবাদী। তাঁকে আপন-পর সকলে আল আমিন উপাধিতে ভূষিত করেন। এককথায় তিনি পৃথিবীর সকল প্রাণী ও জীবজন্তুর উপকারী বন্ধু ছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ (স) এর বয়স যখন চল্লিশ বছরের কাছাকাছি তখন তিনি ব্যকুল হয়ে উঠেন। এসময়ে তিনি জাবালে নূরের হেরাগুহায় আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। অবশেষে রমজান মাসে কদরের রাতে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ) আল্লাহর মহান বাণী সর্বপ্রথম নিয়ে আসেন। তিনি মহানবি (স)-কে লক্ষ্য করে বললেন, اِﻘٛﺮَﺍ (ইক্বরা-পড়ুন)। পড়তে বললেন, কুরআন মজিদের সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত। এভাবে তিনি ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে রমজান মাসের ২৭ তারিখে নবুয়ত লাভ করেন। বিদায় হজের পরে তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে এবং হিজরি একাদশ সালের ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মদিনা শরিফে মসজিদে নববির একপাশে তাঁকে কবর দেওয়া হয়।
নবুয়ত লাভের পর দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে হযরত মুহাম্মদ (স) এর নিকট এ বাণীসমূহ পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ হয়েছিল। কিছু বাণী মক্কায় এবং কিছু বাণী মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (স) এর ইন্তেকালের পূর্বে কুরআন সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে সংকলিত হয়নি, কারণ তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুরআন নাজিলের প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল। অবতীর্ণ অংশসমূহ তখন চামড়া, গাছের বাকল, পাথর, চওড়া হাড়ের খন্ড ইত্যাদিতে লিপিবদ্ধ করা হতো। তবে রাসুলুল্লাহ (স) তাঁর জীবদ্দশায় আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কুরআনের সমুদয় আয়াতের বিন্যাসক্রম ঠিক করে দিয়েছিলেন।


