কুরআন মজিদ শিক্ষা

  পাঠ ৫

কুরআন মজিদ শিক্ষা

কুরআন মজিদ আল্লাহর কালাম। কালাম অর্থ বাণী। এটি সর্বশেষ আসমানি কিতাব যা আল্লাহ তায়ালা মহানবি (স) এর কাছে নাজিল করেন। এটি মানবজাতির সর্বোৎকৃষ্ট ধর্মগ্রন্থ এবং পূর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থা।

দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে সমগ্র কুরআন মজিদ অবতীর্ণ হয়েছিল। কুরআন মজিদের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল ৬০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর যখন মহানবি (স) এর বয়স ৪০ বছর এবং অবতরণ শেষ হয়েছিল মহানবি (স) এর ইন্তেকালের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে।

কুরআন মজিদের ভাষা আরবি। কুরআন মজিদে মোট ৩০ টি পারা বা অধ্যায় রয়েছে। সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। আয়াত সংখ্যা ৬,২৩৬ টি। সূরাগুলো বিভিন্ন আকারের হলেও কুরআন মজিদের পারাগুলো প্রায় সমান আকারের। কুরআন মজিদের সবচেয়ে বড় সূরা হলো সূরা বাকারা। এর আয়াত সংখ্যা ২৮৬। সবচেয়ে ছোট সূরা হলো সূরা কাওসার। এর আয়াত সংখ্যা ৩।

চৌদ্দশ’ বছর অতিক্রান্ত হলেও পবিত্র কুরআন যেমন নাজিল হয়েছিল তেমনি আছে। এই কিতাবের কোন পরিবর্তন হয়নি আর কোন প্রকার পরিবর্তন হবেও না। কারণ এই কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা নিজে।

আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমিই কুরআন মজিদ নাজিল করেছি আর আমিই তা হেফাজত করব।’ (সূরা হিজর)
কুরআন মজিদ তিলওয়াতের উদ্দেশ্য চারটি। যথাঃ

১. শুদ্ধভাবে তিলওয়াত করা
২. এর অর্থ বোঝা
৩. আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালন করা
৪. আল্লাহ তায়ালা যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা

সঠিক উচ্চারণে আমাদের কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা শিখতে হবে। সঠিক উচ্চারণে কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করলে কালামের অর্থ ঠিক থাকে। সালাত শুদ্ধ হয়। সঠিক ও শুদ্ধভাবে কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করতে না পারলে আল্লাহর কালামের অর্থ ঠিক থাকে না। সালাত শুদ্ধ হয় না। সেজন্য আমরা কুরআন মজিদ শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করা শিখব। অপরকে শিখাব। কুরআন মজিদের নির্দেশমতো চলব।

হরকত

আরবি শব্দ উচ্চারণ করার জন্য যে স্বরচিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে হরকত বলে ৷
হরকত তিনটি। যথাঃ যবর , যের , পেশ

১। হরফের উপর যবর থাকলে উচ্চারণে আ-কার হবে।
যথাঃ ﻛَﺘَﺐَ কাফ যবর কা, তা যবর তা, বা যবর বা = কাতাবা।

২। হরফের নিচে যের থাকলে উচ্চারণে ই-কার হবে।
যথাঃ ﻛِﻨَﺎ কাফ যের কি, নূন আলিফ যবর না, = কিনা।

৩। হরফের উপর পেশ থাকলে উচ্চারণে উ-কার হবে।
যথাঃ ﻛُﺘِﺐَ কাফ পেশ কু, তা যের তি, বা যবর বা = কুতিবা।

তানবীন

দুই যবর (), দুই যের () ও দুই পেশ () -কে তানবীন বলে।
তানবীনের উচ্চারণ নূনযুক্ত হয়।

দুই যবর (), দুই যের (), দুই পেশ () একত্রে উচ্চারণ করে এই ছকটি পড় ও লিখ।


জযম

আরবিতে এমন অনেক শব্দ আছে যেখানে অনেক হরফ রয়েছে যাদের যবর, যের, পেশ নেই। কিন্তু আগের হরফের যবর, যের, পেশ রয়েছে। এই যবর, যের, পেশ বিহীন হরফটি উচ্চারণের জন্য একটি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এই চিহ্নকে জযম বলে।
জযমের অপর নাম সাকিন।

জযম বা সাকিনকে তিনটি চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ

উদাহরণঃ اَﻝٛ আলিফ লাম যবর = আল
ﺑِﯽٛ বা ইয়া যের = বী
ﻗُﻦٛ ক্বাফ নূন পেশ = ক্বুন

সুতরাং কোন হরফের উপর জযম বা সাকিন থাকলে পূর্বের হরফের সাথে মিলিয়ে একত্রে একবার উচ্চারণ করতে হয়।
জযমযুক্ত হরফের ছকটি পড় ও লিখ।


তাশদীদ

একই হরফ পাশাপাশি দুইবার উচ্চারণ করাকে তাশদীদ বলে।

তাশদীদ দেখতে শিন হরফের মাথার মতো () ।

তাশদীদের উচ্চারণঃ

১. তাশদীদযুক্ত হরফ দুবার উচ্চারিত হয়।
২. ১ম বার ডানের হরকতের সঙ্গে ২য় বার নিজ হরকতের সঙ্গে।

যেমনঃ ﺍﻥَّ ﻥَ = + ﺍَﻥْ = আলিফ নুন যবর আন, নূন যবর না = আন্না
ﺭَﺏَّ = ﺏْ + ﺭَﺏْ = র বা যবর রব, বা যবর বা = রব্বা

তাশদীদ যুক্ত চার্টটি পড় ও লিখ।


তাশদীদযুক্ত হরফের যের হরফের নিচে ও তাশদীদের নিচে উভয় স্থানে বসতে পারে। যেমনঃ


মাদ্দ

আরবি শব্দের কোনো হরফ টেনে পড়তে হয়। কোনো হরফ দীর্ঘ করে টেনে পড়তে হয়। দীর্ঘ করে টেনে পরাকে মাদ্দ বলা হয়।
মাদ্দ তিন (৩) প্রকার।

যেমনঃ ১ আলিফ মাদ্দ, ৩ আলিফ মাদ্দ ও ৪ আলিফ মাদ্দ।

কিছু অভিজ্ঞ ক্বারী সাহেবের মতে ১ আলিফ মাদ্দ পড়তে কমপক্ষে ১ সেকেন্ড লাগবে।

১ আলিফ মাদ্দঃ

এক আলিফ পরিমাণ টেনে পড়াকে ১ আলিফ মাদ্দ বলে।

১ আলিফ মাদ্দের হরফ তিনটি। যথা- ى , و , ا । এই তিনটি হরফের সাথে মাদ্দের হরফ ব্যবহৃত হয়।

ا (আলিফ খালি) এর ডান পাশের অক্ষরে যবর, و (ওয়াও সাকিন) এর ডান পাশের অক্ষরে পেশ এবং ى (ইয়া সাকিন) এর ডান পাশের অক্ষরে যের হলে মাদ্দ করে পড়তে হয়। যেমনঃ بَا بُوْ بِي

১ আলিফ মাদ্দ এর আরও কিছু চিহ্ন আছে। যেমনঃ

১। খাড়া যবর

কোনো হরফের উপর এরূপ চিহ্ন থাকলে সে হরফটকে ১ আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হবে।
যথাঃ ﻃٰﻪٰ = তোয়া খাড়া যবর তোয়া, হা খাড়া যবর হা = তোয়া-হা

২। খাড়া যের

কোনো হরফের উপর এরূপ চিহ্ন থাকলে সে হরফটকে ১ আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হবে।
যথাঃ ﺑِﻪٖ = বা যের বি, হা খাড়া যের হী = বিহী

৩। উল্টা পেশ

আমরা জানি পেশ এরূপ। তবে উল্টা পেশ লেখা হয় এভাবে।
কোনো হরফে উল্টা পেশ থাকলে সে হরফটকে ১ আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হবে।
যথাঃ ﻟَﻪٗ = লাম যবর লা, হা উল্টা পেশ হূ = লাহূ

৩ আলিফ মাদ্দঃ

তিন আলিফ পরিমাণ টেনে পড়াকে ৩ আলিফ মাদ্দ বলে।

৩ আলিফ মাদ্দের চিহ্ন –

যে হরফের উপর এরূপ চিহ্ন থাকে সে হরফটিকে তিন আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হয়।
যথাঃ ﻛَﻤَﺎۤ = কামা- - -

৪ আলিফ মাদ্দঃ

চার আলিফ পরিমাণ টেনে পড়াকে ৪ আলিফ মাদ্দ বলে।

৪ আলিফ মাদ্দের চিহ্ন –

যে হরফের উপর এরূপ চিহ্ন থাকে সে হরফটিকে চার আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হয়।
যথাঃ =যা- - - -আ