দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

  পাঠ ৬

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ‘দ্বীন’ – একটি পূর্নাঙ্গ ও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। একজন মুসলমানকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের আলোকে জীবন যাপন করতে হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের নীতিমালা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন -

উচ্চারণঃ ইন্নাদ্দীনা ‘ইনদাল্লা-হিল ইছলা-মু

অর্থঃ ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।’

(সুরা আল-ইমরানঃ আয়াত ১৯)

উচ্চারণঃ আলইয়াওমা আকমালতুলাকুম দীনাকুম ওয়া আত মামতু‘আলাইকুম নি‘মাতী ওয়া রাদীতুলাকুমুল ইছলা-মা দীনান।

অর্থঃ ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে (জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে) পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’

(সুরা মায়েদাঃ আয়াত ৩)

দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেক মানুষের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা, আল্লাহকে ভয় করা এবং আল্লাহর বিধি মোতাবেক জীবনযাপন করা। মানুষ যেমন তার দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুসরণ করবে, তেমনি অন্য মানুষকে ইসলাম অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

আমাদের জীবনে প্রতিটি সঠিক কাজের জন্য বিভিন্ন দোয়া রয়েছে যা মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর দৈনন্দিন জীবনে পালন করেছেন। এই দোয়াসমুহ পড়ে সেই সংক্রান্ত কাজগুলো করলে কাজে যেমন বরকত ও সফলতা আসে, তেমনি সওয়াবও লাভ হয়।

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ। ’

(তিরমিজি : ৩৩৭১)

এবং তিনি আরও বলেছেন, ‘দোয়া ইবাদত।’

(তিরমিজি :২৯৬৯)

ঘুম থেকে উঠার দোয়াঃ

ﺍَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।

অর্থঃ সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।

ঘুমানোর সময় পড়ার দোয়াঃ

اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।

অর্থঃ হে আল্লাহ ! আপনার নামেই মরে যাই আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।
মহানবি (স) রাতের বেলায় নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাত ডান গালের নিচে রেখে উপরোক্ত দোয়া পড়তেন।

খাওয়ার শুরু করার দোয়াঃ

بِسْمِ اللَّهِ وَ عَلَى بَرَكَةِ اللهِ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ওয়া ’আলা বারকাতিল্লাহ।

অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ তায়ালার বরকতের সাথে এ খাবার খাচ্ছি।

খাওয়ার শুরুতে দোয়া পড়তে ভুলে গেলে খাওয়ার মাঝে স্মরণ আসার পর এই দোয়া পড়তে হয়।

بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখীরাহু।

অর্থঃ আল্লাহর নামে শুরু এবং শেষ করছি।

খাওয়ার শেষ করার দোয়াঃ

بِاَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ اَطْعَمَنَا وَ سَقَانَا وَ جَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْن

উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহিল্লাজী আত্ব আ’মানি ওয়া ছাক্কানি ওয়া জাআলানি মিনাল মুছলেমীন।

অর্থঃ সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জন্য যিনি আমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন এবং আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন।

কেউ খাওয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ না বললে সেই খাবারে শয়তান তার সাথে অংশগ্রহণ করে, বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলে সেই খাবার থেকে শয়তান কিছু খেতে পারেনা।

আর কেউ যদি বিসমিল্লাহ না বলে খাওয়া শুরু করে এবং পরে মনে করে খাওয়ার দোয়া পড়ে, তাহলে শয়তান যা খায় তা বমি করতে বাধ্য হয়।

(মুসলিম)

রাসুল (স) বলেন, ‘যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় না, শয়তান সেই খাবারকে তার জন্যে হালাল মনে করে।’

ডান হাত দিয়ে খাওয়া

মহানবি (স) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেতেন। তিনি বাম হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। মহানবি (স) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।

(বুখারি - ৫৩৭৬, মুসলিম – ২০২০)

মহানবি (স) এর খাবার খাওয়ার সময় যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের খাবার আহারের সময় যদি লুকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা ভক্ষণ করো। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না।’

(মুসলিম – ২০৩৪)

টয়লেটে যাওয়ার আগে দোয়া

بِاَللَّهُمَّ اِ نِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবসী ওয়াল খাবায়িস।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি মন্দ কাজ ও শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

উপরোক্ত দোয়া পড়ার পর টয়লেটে আগে বাম পা প্রবেশ করাতে হবে।

টয়লেটে কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ না দিয়ে বসতে হবে।

(বুখারি - ১৪৪)

টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার দোয়া

بِغُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ

উচ্চারণঃ গুফরানাকা আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আজহাবা আ’ন্নিল আজা ওয়া আ’ফানী।

অর্থঃ আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন।

বাথরুম বা টয়লেট নাপাক ও নোংরা স্থান। নাপাক ও নোংরা স্থানে শয়তান বাস করে। কেউ টয়লেটে প্রবেশের সময় দোয়া না পড়লে শয়তান আমাদেরকে দেখতে পায়। কিন্তু কেউ যদি টয়লেটে প্রবেশ করার আগে উপরোক্ত দোয়াটি পড়ে নেয়, তবে শয়তান তাকে আর দেখতে পায় না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না। এই দোয়ার পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় গ্রহণ করি।

ঘরে প্রবেশের দোয়াঃ

بِاللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আস’আলুকা খাইরল মাউলিজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা ওয়া বিসমিল্লাহি খরাজনা ওয়া ‘আলাল্লাহি রব্বিনা তাওয়াক্কালনা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার কাছে বাসায় প্রবেশের কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ও আপনার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আল্লাহ তায়ালার নামেই বের হই। এবং আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করি।

রাসূল (স) বলেছেন- ‘যখন তোমাদের কেউ ঘরে প্রবেশ করে, আর প্রবেশের সময় ও খাবারের সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান নিজ সঙ্গীদের ডেকে বলে, তোমাদের কোনো বাসস্থান নেই, তোমাদের রাতের কোনো খাবারও নেই।’

(মুসলিম)

ঘরে থেকে বের হওয়ার দোয়াঃ

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি।

অর্থঃ আল্লাহর নামে বের হচ্ছি; আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় নেই; আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তিও নেই।

রাসূল (স) বলেছেন- “যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়া বলবে তখন তাকে বলা হয়, তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছো, রক্ষা পেয়েছো ও নিরাপত্তা লাভ করেছো। সুতরাং শয়তানরা তার থেকে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান বলে, তুমি ঐ ব্যক্তিকে কি করতে পারবে যাকে পথ দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে।”

হাই আসলে কী করতে হবে?

হাই আসে অলসতা ও জড়তার কারণে। আর এ সব আসে শয়তানের কাছ থেকে। কাজেই আমাদের যখন হাই আসবে যথাসম্ভব তা রোধ করতে হবে। কেননা কেউ হাই তুললে শয়তান তার প্রতি হাসে।

(বুখারি - ৩২৮৯)

রাসূল (স) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কারো হাই আসে, তখন সে যেন নিজের হাত দ্বারা মুখ বন্ধ করে রাখে। নতুবা শয়তান তার মুখের ভিতরে চলে যায়।’